স্বীকৃত নির্লোভ নির্হংকার নির্মোহ সদা হাস্যোজ্জল আগাগোড়া ভদ্র নম্র বিনয়ী সাদা মনের একজন মানুষ মাষ্টার জাহেদ হোসন স্যার।যার জীবণের ৩২ টি বছর কেঁটেছে মানুষ গড়ার কাজে।১৯৪৭ সালের ২৭ই অক্টোবর তদানীন্তন টেকনাফ থানার ৪ নং সাবরাং ইউনিয়নের অজপাড়া গাঁও শাহপরীর দ্বীপের উত্তর পাড়ার কৃষক পরিবারে মরহুম নজির আহমদ আর মরহুমা বিওলা খাতুনের সংসারে জন্ম নেন এই ক্ষনজন্মা শিক্ষা গুরুও বীর মুক্তিযোদ্ধা।গ্রামের স্কুলে প্রাথমিক পাঠ সম্পন্ন করে টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় হতে ১৯৬৪ সনে তদানীন্তন মেট্রোকোলেশন(এসএসসি) পাশ করে একই বছর সরকারী প্রাথমিক স্কুলের সহকারী শিক্ষক হিসাবে টেকানাফ সরকারী প্রাথমিক স্কুলে যোগদানের মাধ্যমে শিক্ষকতার মত মহান পেশায় আত্মনিয়োগ করেন।শিক্ষকতার সাথে সাথে নিজের লেখাপড়াও চালিয়ে যান।ফলশ্রুতিতে ১৯৬৭ সালে কক্সবাজার সরকারী কলেজ থেকে ইন্টামেডিয়েট(আইএ)পাশ করে স্নাতকে ভর্তি হন।জীবণ জীবিকার সন্ধানী এই মানুষটি ১৯৭০ সালের অসহযোগ আন্দোলনের পথ ধরে ১৯৭১ সলের ২৬ই মার্চ দেশ স্বাধীনের প্রবল বাসনা নিয়ে নিজের জান বাজি রেখে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে যাপিয়ে পড়েন সবারই অগোছরে।১ নং সেক্টরের কমান্ডার মেজর(অবঃ)রফিকুল ইসলাম বীর বিক্রমের নেতৃত্বাধীন ক্যাপ্টিন(আঃ)আব্দুস সোবহানের সার্বিক তত্বাবধানে অধিনায়ক শ্রী জয়লেন বড়ুয়ার স্বশস্ত্র প্রশিক্ষন নিয়ে মোরং পাড়া,সোনাই ছড়িস্হ ৩০৩ নং ব্যাটলিয়ানে পাক হায়নাদারও দেশীয় রাজাকার আল্ বদর আল্ শামসদের বিরোদ্ধে পরম সাহসিকতার সাথে দীর্ঘ্য ৯ মাস স্বশস্ত্র যুদ্ধ করেন।যৌবনের সোনলী দিন আর মা বাবার একমাত্র আদরের সন্তানের আদর সোহাগের মায়া মমতা ত্যাগ করে মৃত্যুর জুঁকি নেয়া এই বীর মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধ শেষে বীর বেশে ফিরে আসলেও কোন দিন নিজের গর্বিত কর্মের আচরণ কারো সাথে করেননি বরং শিক্ষকতার মহান পেশায় ফিরে সাধারণ জীবণ যাপন করে মানুষ গড়ার মহা কারিগরে মনোনিবেশ করেন।শিক্ষকতা জীবণে তাঁর হাতে গড়া ছাত্ররা আজ দেশের সর্বোচ্চ আদালতের মাননীয় বিচাপতি,সচিব, যুগ্নসচিব,স্বনামধন্য চিকিৎসক, প্রকৌশলী, ব্যাংকার,উকিল, স্কুল কলেজ বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষক সহ নানাবিধ কর্মের মাধ্যমে দেশ সেবার মহান ব্রতি নিয়ে নিজ নিজ কর্মস্হলে অনন্য প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন।যা দেখে প্রায় ৭৪ বছর বয়স্ক এই বীর মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষক পরম তৃপ্তি অনুভব করেন।শিক্ষকতা জীবণে শিক্ষাদান ব্যাতিত রাজনীতি কিংবা অন্য কোন পেশায় নিজেকে সম্পৃক্ত না করে এক অতুলনীয় নজির স্হাপন করেছেন।একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হয়েও কোন দিন কোন পদ-পদবীর লালসায় তাঁকে আকৃষ্ট করেনি।১৯৭৭ সাল হতে ১৯৯৬ পর্যন্ত টেকানাফও নিজ এলাকায় প্রধান শিক্ষকের দায়ীত্ব পালন করে অবসর নেয়ার পর হতে অদ্যাবধি সমাজ উন্নয়ন মূলক কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন।নিজ গ্রামে শাহ্পরীর দ্বীপ হাজী বশির আহমদ উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্টার অন্যতম উদ্ধ্যোক্তা তিনি।২০১৪ সালে এক অনাকাঙ্ক্ষিত দূর্ঘটনায় এক পাঁ ভেঙ্গে ১ বছর চিকিৎসা নিয়ে কোন মতে হাঁটাচলা করতে পারেন কিন্তু বীরের বীরত্ব থেমে নেয়।দেশ এবং জনগণের স্বার্থে যেখানে প্রয়োজন সেখানেই তিনি স্বশরীরে হাজির হন।কি বেড়িবাঁধ কি রাস্তা কি শিক্ষা সব প্রয়োজনেই তিনি সদা অগ্রভাগে থেকে বিরামহীন নিঃস্বার্থ শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন।৭৪ বছরের একজন পৌঢ়র মানুষ শুধুই দেশ মাতৃকতায় উদ্ভোদ্দ হয়ে পরম সাহসীকতা আর সততার সাথে নিজেকে জনকল্যানে বিলিয়ে দিয়েছেন।বর্তমানে তিনি টেকানাফ উপজিলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি এবং উপজিলা দূর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির ৪ বারের সভাপতি।অগণিত শিক্ষা প্রতিষ্টানের সাথে সম্পৃক্ত এই বীর মুক্তিযোদ্ধা সম্প্রতি উপজিলা ভিত্তিক মুক্তিযোদ্ধা যাচায় বাচাঁয় তালিকায় ১১ নাম্বারে নিজের নাম দেখে আনন্দে অশ্রু ঝরিয়ে বলেন স্বাধীনতার ৪৯ বছর পর মৃত্যুর আগ মূহুর্তে হলেও নিজের নাম সরকারী ভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় অন্তর্ভূক্তি দেখে আমি অত্যাধিক খুশিও পরম তৃপ্ত।তিনি বলেন স্বশস্ত্র যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি,সারা জীবণ শিক্ষকতা ও শিক্ষিত সমাজ গঠনের কাজ করেছি এর চেয়ে বড় আর কি তৃপ্তি হতে পারে??পারিবারিক জীবণে ৫ মেয়েও ২ ছেলের গর্বিত পিতা রণাঙ্গনের এই সম্মূখ বীর মুক্তিযোদ্ধা একবুক আশা নিয়ে বলেন বাকী জীবণও মানুষ আর দেশের সার্বিক কল্যাণে কাঁটিয়ে দিবার জন্য সবার কাছে অান্তরিক দোয়া চাই।
আমরা এমন একজন মহান মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষকের ছাত্র এবং এলাকার মানুষ হিসাবে নিজেদের গর্বিতও ধন্য মনে করি।দোয়া করি মহান আল্লাহ্ পাক আমাদের সবার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব মাষ্টার জাহেদ হোসেন স্যারের হায়াতে বরকত দান করুন এবং সুস্হতার সাথে বাকী জীবণ কাঁটানোর তওফিক দান করুন।
শরীফ গফফারী
২৭/১১/২০২০ ইং
শুক্রবার।