মিজানুর রহমান মিজান,টেকনাফ।
আলহামদুলিল্লাহ,সিয়াম সাধনায় আত্মশুদ্ধীর পবিত্রতার মাস রামাযান।তীব্র গরমের পর আজ রহমতের বৃষ্টি সকল রোজাদারের মনে প্রশান্তি ফেলছে সস্তির নিশ্বাস।টেকনাফ তথা পুরো দেশবাসী,গাছ পালা,তরুলতা,পশু পাখী সহ সকল আল্লাহর সৃষ্টি মাখলোক আজ যেন শান্ত ও ক্লান্তিহীন ঘুমে।সবই যেন গাইছে গুন গুন করে রবের গুনগান আর জানাচ্ছে আলহামদুলিল্লাহ।যখন মানুষ আখিরাতের জবাবদিহিতার কথা ভুলে যায়;তখনি সে পাপ করে।যখন মানুষ কবরের সাওয়াল জবাবের কথা ভুলে যাই;তখনি সে পাপ করে।চোখের সামনে দেখে তার কত আত্বীয় স্বজন প্রিয়জন মারা যাচ্ছে।তারপরও নিজের মৃত্যুর কথা মনে আসেনা।মনে করে মৃত্যু কত দূর!এখন ও কত জীবন পড়ে আছে।কত কিছু করার আছে।দুনিয়াবি কাজেকর্মে এতটাই ব্যস্ত হয়ে যায়;
মানুষ ভুলেই যায় যে আল্লাহ আমাদের পরিক্ষা করছেন।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সৃষ্টিই করেছেন পরীক্ষা করার জন্য।আমাদের মধ্যে কে সবচেয়ে বেশি পরহেযগার/মুত্তাকি!ধরুন রাস্তা দিয়ে একটাছেলে/মেয়ে হেঁটে যাচ্ছে।এদিক ওদিক দেখলো কোনো মানুষ আছে কিনা।দেখলো কেউ নাই।তখন সে ছেলে/মেয়েটাকে ভালকরে দেখলো।অন্যদিকে সে দেখল রাস্তায় অনেকমানুষ আছে।তখন সে মেয়েটার দিকে বাঁকা চোখে দেখল অথবা দেখলোই না।তাহলে সে কি মুত্তাকি হলো?কক্ষনো নাহ।এখানে সে আল্লাহ তায়ালা কে ভয় করছেনা;মানুষ কে ভয় করছে।
পরহেযগার হচ্ছে সেই ব্যক্তি;
যার কাছে পাপ করার সমস্ত উপায় উপকরন মওযুদ আছে।
হাত বাড়ালেই সে পাপ করতে পারে;
একান্ত নিরবে নিভৃতে নির্জনে;
কেও জানবে না।
এই কঠিন পরিস্থিতিতে সে আল্লাহর ভয়ে নিজেকে এই গুনাহ থেকে বিরত রেখেছে।
যেনার রিলেশন থেকে নিজেকে দূরে রেখেছে।
সুদ ঘুষ/ হারাম খাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রেখেছে।
সমাজের ঠাট্টা বিদ্রুপ উপেক্ষা করে সে পূর্ন পর্দা করেছে।
যে আল্লাহ তায়ালা কে ভয় করে চলেন;
আল্লাহ তায়ালা দুনিয়া আখিরাতে তার সন্মান বাড়িয়ে দেন।
মুত্তাকি/পরহেযগার আল্লাহর বান্দা বান্দি প্রকাশ্য এবং অপ্রকাশ্য সকল অবস্থায় আল্লাহকে ভয় করে চলেন।
আল্লাহর হুকুম মেনে চলেন।
ছোট ছোট গুনাহকে তো গুনাহই মনে করেনা।
বড় বড় গুনাহ কেও নাথিং মনে করে মানুষ।
আল্লাহ তায়ালাকে ভুলে গেছে;
আল্লাহর বিধি বিধান কেও ভুলে গেছে।
কুরআন হাদিস পড়ার বিন্দুমাত্র সময় নেই।
কুরআন হাদিস পড়েও ব্যক্তিগত জীবনে আমল করতে পারছেনা।
মন যা চাই তাই করছে।
যেনো নিজেই নিজের খেয়াল খুশীর মালিক।
আল্লাহর পরিক্ষায় সে মারাত্বক ভাবে ফেইল।
দিনে শেষে তার কাজের কোনো মূল্য নাই।
কোনো বারাকাহ নেই।
আসুন আমরা কুরআনের কিছু আয়াত পড়ি।
তাকওয়ার গুরুত্ব অনুধাবন করার চেষ্টা করি।
আল্লাহ বলেন :
যারা ঈমান আনে এবং তাকওয়া অবলম্বন করে।
“তাদের জন্য আছে সুসংবাদ পার্থিব জীবনে ও পরকালীন জীবনে। আল্লাহর কথার কখনো হের-ফের হয় না। এটাই হল মহা সফলতা।” (সূরা ইউনুস আয়াত ৬৩-৬৪)
” হে ঈমানদারগণ তোমরা যদি তাকওয়ার অনুসরণ করতে থাক, তবে (আল্লাহ) তোমাদেরকে মধ্যে ভালো-মন্দের পার্থক্য বোঝার তৌফিক দেবেন এবং তোমাদের থেকে তোমাদের পাপকে সরিয়ে দেবেন এবং তোমাদের ক্ষমা করবেন। বস্তুতঃ আল্লাহর অনুগ্রহ অত্যন্ত মহান। (সূরা আনফাল আয়াত ২৯)
” যারা তাকওয়া অর্জন করে এবং আচার-আচরণকে সংশোধন করে, তাদের কোন ভয়-ভীতি নেই এবং তারা দুঃখিত হবে না। ” (সূরা আরাফ আয়াত ৩৫)
” যারা তাকওয়ার অনুসরণ করেন, তাঁদের উপর শয়তানের আগমন ঘটার সাথে সাথেই তাঁরা সতর্ক হয়ে যান এবং তখনই তাঁদের বিবেচনাশক্তি জাগ্রত হয়ে উঠে। ” (সূরা আরাফ আয়াত ২০১)
” আর যে তাকওয়ার অনুসরণ করে, আল্লাহ তার জন্যে নিস্কৃতির পথ করে দেবেন। এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিযিক দেবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট। ” (সূরা ত্বালাক আয়াত ২-৩)
” আর তোমরা তাকওয়ার অনুসরণ কর এবং জেনে রাখ, যারা মুত্তাকী, আল্লাহ তাদের সাথে রয়েছেন। ” (সূরা বাকারাহ আয়াত ১৯৪)
” যে তাকওয়ার অনুসরণ করে, আল্লাহ তার পাপ মোচন করেন এবং তাকে মহাপুরস্কার দেন। ” (সূরা ত্বালাক আয়াত ৫)
আর আমরা তাদেরকে রক্ষা করেছিলাম,যারা ঈমান এনেছিল ও তাকওয়া অবলম্বন করেছিল। (সূরা হা মিম আস সাজদা আয়াত ১৮ )
” যারা নিজ প্রতিজ্ঞা পূর্ন করবে এং তাকওয়ার অনুসরণ করে, তাঁরা জেনে রাখুক, আল্লাহ মুত্তাকীদেরকে ভালবাসেন। ” (সূরা আলে ইমরান আয়াত ২৬)
“নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক মুত্তাকী। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন।” (সূরা হুজুরাত আয়াত ১৩)
নিশ্চয় নামায অশ্লীল ও গর্হিত কার্য থেকে বিরত রাখে [২৯-৪৫]
হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তার এবাদত কর, যিনি তোমাদিগকে এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদিগকে সৃষ্টি করেছেন। তাতে আশা করা যায়, তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারবে। [২/২১]
তিনি আরও বলেন, হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার। [২/১৮৩]
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন ইবাদত কর যেন তাকওয়া অর্জন করতে পারো, সাওম কর যেন তাকওয়া অর্জন করতে পারো। তাহলে ইবাদাতের একটা উদ্দেশ্য হল- তাকওয়া, আল্লাহর ভয় অর্জন করা।
অন্যত্র তিনি বলেন, এগুলোর গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, কিন্তু পৌঁছে তাঁর কাছে তোমাদের মনের তাকওয়া। [২২/৩৭]
হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল। তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের কাজগুলোকে শুদ্ধ করে দেবেন এবং তোমাদের পাপগুলো ক্ষমা করে দেবেন। [৭০-৭১]
যদি আমাদের ইবাদতে আল্লাহর ভয় তৈরী হতো তাহলে আল্লাহ সব প্রাচুর্যের ব্যবস্থা করে দিতেন,
আর যদি জনপদসমূহের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত তাহলে আমি অবশ্যই আসমান ও যমিন থেকে বরকতসমূহ তাদের উপর খুলে দিতাম। [৭/৯৬]
যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরি করে দেন। এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিযক দিবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। [৬৫/২-৩]আল্লাহ তুমি আমাদের সবাইকে তোমার মুত্তাকী বান্দা হিসেবে কবুল করো।মা বাবার প্রিয় মা’ময় মাটি আমার প্রাণের টেকনাফ কে তোমার রহমতের গায়েবী শক্তি দিয়ে মাদক মুক্ত কর,কলঙ্ক মুক্ত কর।আমার এলাকার মানুষকে শান্তি সমৃদ্ধির সঠিক পথে পরিচালিত কর।যাদের এখনও দেশপ্রেম আত্মপ্রেমের অনুভব নেই তাদের হেদায়াত দান কর-আমিন।আমিন।ওস্সালাতু আসসালামু আলা রাসুলুল্লাহ (সঃ)