| শাহজাহান চৌধুরী শাহীন | কক্সবাজার!|
সাগর পথে মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্য পাড়ি দিয়ে মাঝ পথে ফেরত সাড়ে ৪ শতাধিক রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড ও পুলিশ সদস্যরা।
বুধবার (১৫ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৮ টার দিকে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের হলবনিয়া পাড়া ঘাট থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়েছে।
উদ্ধার হওয়া প্রত্যেকেই টেকনাফ ও উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে সাগরপথে ট্রলার যোগে মালয়েশিয়া যাওয়ার উদ্দেশ্য রওয়ানা দিয়েছিল।
১০/১৫ দিন সাগর থাকার পর মালয়েশিয়া যেতে না পেরে বাহারছড়া হলবনিয়া ঘাটে ট্রলারটি ভেড়ানোর সময় আটকা পড়ে। এসময় অনেক রোহিঙ্গা পালিয়ে নিরাপদে সরে পড়ে।
খবর পেয়ে বাহারছড়া কোষ্টগার্ড ও পুলিশ তাদের উদ্ধার করেন। উদ্ধার হওয়াদের মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছে।
টেকনাফ স্টেশন কোস্ট গার্ডের কর্মকর্তা লে.কমান্ডার এম সোহেল রানা বলেন, রোহিঙ্গা ভর্তি একটি বড় ট্রলার টেকনাফ বাহারছড়া গলবনিয়া (জাহাজপুরা) ঘাট দিয়ে উঠার সময় ৪ শতাধিক রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করা হয়েছে। তারা বেশ কিছু দিন আগে সাগর পথে মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিল। কিন্তু মালয়েশিয়ায় ট্রলারটি ভিড়তে না পেরে আবার চলে আসেন। গত কয়েক মাস ধরে বাহারছড়া কেন্দ্রীক ৭ সদস্য এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রীক মানবপাচারকারী সিন্ডিকেট রোহিঙ্গাদের মালয়েশিয়া পাচার করেছিল।
টেকনাফ উপজেলার ইউএনও মো.সাইফুল ইসলাম বলেন, মালয়েশিয়া ফেরত ৪ শতাধিকের মত রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করা হয়েছে। তারা মালয়েশিয়া যেতে না পেরে ফের ফেরত আসেন। তাদেরকে হলবনিয়া ঘাটে এক জায়গায় জড়ো করা হচ্ছে। পরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তবে উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে বেশির ভাগ নারী ও শিশু রয়েছে।
উদ্ধার হওয়া কয়েকজন বলেন, গত দুই মাস আগে প্রায় ৫০০ জন রোহিঙ্গা ভর্তি একটি জাহাজ ( সাগরে ট্রলিং জাহাজ) সাগর পথে মালয়েশিয়া পাড়ি দিই। কিন্তু সেদেশে কড়াকড়ির কারনে ঢুকতে না পেরে পুনরায় এখানে ফিরে আসি। সাগরে এতো দিন ভাসমান ছিলাম। এখন ট্রলারে চার শতাধিক জন রয়েছে। অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছে, ক্ষুধার জ্বালায় কাতরাচ্ছে বেশির ভাগ রোহিঙ্গা।
ঘটনাস্থল থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে তারা কয়েক জনের সাথে কথা বলেছেন, উদ্ধার হওয়ারা তাদেরকে জানিয়েছেন, মালয়েশিয়া থেকে ফেরত আসা জাহাজে প্রায় ৬০ জনের লোক মারা গেছেন। জাহাজের উপর একজন মৌলভী জানাজা পড়ে মরদেহ গুলো সাগরে ফেলা দেয়া হয়েছে। তাদের অধিকাংশের বাড়ি টেকনাফ ও উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে।
একটি সুত্রে জানা গেছে, এরআগে চলতি মাসের শুরুতে দুইশ’রও বেশি মানুষ নিয়ে একটি ট্রলার আটক করা হয়েছে মালয়েশিয়ার সাগরপাড়ে। আটককৃতদের রোহিঙ্গা দাবি করছে কর্তৃপক্ষ।
এই মুহূর্তে সবাই যখন করোনাভাইরাস নিয়ে উদ্বিগ্ন ঠিক তখনই মানব পাচারকারীরা এই সুযোগ অবৈধভাবে রোহিঙ্গা মালয়েশিয়ায় নিয়ে আসছে বলে দাবি দেশটির কর্তৃপক্ষের।
মালয়েশিয়ার অভিজাত পর্যটন এলাকা লঙ্কাউইর কাছে একটি রিসোর্টের এক নটিক্যাল মাইলের মধ্যে পাওয়া গেছে এই নৌকাটি। দেশটির নৌবাহিনী এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
২০২ জনের ওই দলে ১৫২ জন পুরুষ, ৪৫ জন নারী ও পাঁচটি শিশু আছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় গণমাধ্যম জানায়, ভোর পাঁচটার দিকে কাঠের একটি নৌকা দেখতে পায় এলাকাবাসী। তখন তাদের একজন ঘটনাটি পুলিশকে জানালে তারা এসে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
কোস্টগার্ড বলছে, এই পুরো গ্রুপটিকে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে কারণ তারা অবৈধভাবে মালয়েশিয়ার সীমায় ঢুকেছে।
তবে সেখান থেকে তিনজন পাচারকারী পালিয়েছেন বলছে মালয়েশিয়ায় ঢুকতে চেষ্টা করা দলটি। তাদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ দায়ের করা হবে।
একাধিক সুত্রে জানা গেছে, টেকনাফের স্থানীয় কয়েকটি মানবপাচারকারী চক্র গত ২/৩ দিন ধরে টেকনাফ বাহারছড়া শামলাপুর ক্যাম্প, কুতুপালং ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গা সংগ্রহ করে সাগর পথে মালয়েশিয়ায় পাচার করে আসছে।
সুত্র আরো জানায়, বাহারছড়া শামলাপুর আচার বনিয়ার মনজুর, শামলাপুর ২৩ নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মোহাম্মদ নুর, জোবাইয়ের, ইলিয়াছ, দিন মোহাম্মদ লেংইগা ও কেফায়েত উল্লাহ, শামলাপুর নতুনপাড়ার আয়াত উল্লাহ গত কয়েক মাস ধরে মানবপাচার করে আসছে।
স্থানীয় অধিবাসীরা ও পুলিশ অভিযান চালিয়ে দফায় দফায় মালয়েশিয়াগামী অনেক রোহিঙ্গা আটক করে ক্যাম্পে ফেরত দিয়েছিল।
স্থানীয় সুত্র আরো জানান, উখিয়া মনখালী বটতলি ঘাট দিয়ে মনজুর আলম ও চেপটখালীর আনোয়ার ইসলাম গত দুই মাস ধরে সাগর পথে মানবপাচার করেছে।
সুত্রে আরো জানা যায়, সাগরপথে মালয়েশিয়া মানবপাচার হচ্ছে তিন ধাপে। প্রথম ধাপে মাছ ধরার নৌকায় করে রোহিঙ্গাদেরকে সাগরে অপেক্ষমান বোটে তুলে দেয়।
পরে বোট থেকে গভীর সাগরে অপেক্ষমান বড় জাহাজে তুলে দেয় রোহিঙ্গাদের।
গত একমাস আগে শামলাপুরের স্থানীয় জেলেরা একটি বড় কাঠের বোট আটক করে বাহারছড়া পুলিশের হাতে সোপর্দ করে। পুলিশ ওই বোটটি স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছে জিম্মায় দিয়েছেন।
গত কয়েকমাস যাবত বাহারছড়ার হলবনিয়া ঘাট, কচ্ছপিয়া ঘাট, শীলখালী ঘাট, মনখালী বটতলি ঘাট, চেপটখালী ঘাট ও চোয়ানখালী ঘাট দিয়েই মানবপাচার হয়েছে বলে স্থানীয় সুত্র জানায়।
এর আগে ফেব্রুয়ারিতে বঙ্গোপসাগর দিয়ে ১৩০জন যাত্রী নিয়ে সাগর পার হওয়ার চেষ্টা করার সময় ডুবে যায় একটি নৌকা। ওই ঘটনায় মার যান ১৫ জন রোহিঙ্গা।