মিজানুর রহমান মিজান।
পর্যটননগরী কক্সবাজারসহ আশপাশের এলাকায় বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) রাত ১০টায় প্রত্যেক মসজিদের মাইকে এবং লোকজন বাড়ির উঠানে বা রাস্তায় বের হয়ে সম্মিলিতভাবে আজান দিতে শোনা গেছে। টেকনাফ এবং তৎসংলগ্ন প্রতিটি এলাকায় এই আযানের সংবাদ পাওয়া গেছে।এনিয়ে সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আযান ধ্বনির জোয়ার বয়ে গেছে।বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন মতামত আর মন্তব্যে যুক্তিতর্ক এবং ফতোয়ায় সয়লাব।জানা যায় টেকনাফে আবার মসজিদের মুসল্লিদের মাঝরাতে মিছিল করার সংবাদ।ঠিক কি হতে চলেছে হঠাৎ কেন একযোগে আযানের ধ্বনি?এনিয়ে সাধারণ মানুষ থেকে গৃহিনী,জনপ্রতিনিধি থেকে গনমাধ্যম ব্যক্তি সবার মাঝেই কৌতুলের শেষ নেই।
তবে কোন ধরনের গুজবে কান না দিয়ে ঘরের ভিতরেই অবস্থান করতে এবং করোনা মোকাবেলায় সহায়তা করার জন্য কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ্য থেকে জানানো হলে পরিস্থিতি আবার শিতিল হয়।
সারাদেশের মতো কক্সবাজার এবং টেকনাফে লকডাউনে সুনসান নগর পৌর এলাকা এবং পাড়া গ্রাম মহল্লায় রাতের নিস্তব্ধতাকে ভেঙে খান খান করে দেয় আজানের সেই ধ্বনি। একের পর এক বিভিন্ন মসজিদে আর ঘরের জানালা বা বারান্দায় আবার কেউ কেউ গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে স্থানীয়রা এ আজান দেন।
অনেকের মতে করুন সেই আযানের সুরে ছিল করোনা নামক অভিষাপ থেকে মুক্তির আকুতি।
জানাগেছে, কয়েকটি ইসলামী সংগঠনের আহ্বানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একত্রিত হয়ে এই সম্মিলিত আজানের আয়োজন করা হয়।
ইসলামী চিন্তাবিদদের মতে, আজান ইসলামের এক মৌলিক ইবাদত নামাজের দিকে আহ্বানের মাধ্যম। আজানের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত অবতীর্ণ হয়,বিপদ ও আজাব দূরীভূত হয়। হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত হাদীসে হুযুর (ﷺ) এরশাদ করেন- “اِذَا اُذِّنَ فِیْ قَرِیَةٍ اٰمَنَھَا اللہُ مِنْ عَذَابِهٖ فِیْ ذٰلِكَ الْیَوْمِ” যখন কোন গ্রামে আজান দেয়া হয়, তখন মহান আল্লাহ (ﷻ) সেদিন ওই গ্রামকে তার আজাব থেকে নিরাপদে রাখেন।
আলেমদের দেয়া তথ্য মতে মহামারির সময় আজান দেয়া একটি মুস্তাহাব বিষয়। ফিকহে হানাফীর প্রসিদ্ধ গ্রন্থ রদ্দুল মুখতার বা ফতোয়ায়ে শামীতে আজানদানের ১০টি মুস্তাহাব সময়ের মধ্যে মহামারির সময় আজানের কথা উল্লেখ রয়েছে। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা মহামারি থেকে রক্ষায় অন্যান্য আমলের পাশাপাশি আজান দেয়া একটি শরীয়ত সমর্থিত মুস্তাহাব আমল। এটার জন্য কোনো সময় নির্ধারিত নেই।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি মাহমারিতে আক্রন্ত স্পেনে করোনাভাইরাস থেকে মুক্তির জন্য স্রষ্টার কৃপা কামনায় সম্মিলিতভাবে আজানের আয়োজন করা হয়।
আতঙ্ক নয় সচেতনতায় করোনা মোকাবেলায় সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে।সরকারের নির্দেশনা ও স্থানীয় প্রশাসনের স্বস্থ্যবিধি ও নিয়ম মেনে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ধৈর্যের সাথে বিশ্বজাহানের সৃষ্টকর্তার উপর ভরসা পূর্বক প্রার্থনা করতে হবে।