এডভোকেট আহমেদ মিরাজঃ-
মানুষ সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকেই প্রকৃতির বিরুদ্ধে যুদ্ধে করে টিকে আছে। আসলে কথা টি আমরা ভুল ভাবে বলি। আমি মনে করি মানুষ তার নিজ স্বার্থের প্রয়োজনে প্রকৃতিকে নির্বিচারে ধ্বংস করেছে কখনো কম কখনো বেশি। মানুষ সব সময় প্রকৃতির বিরুদ্ধে আচরণ করতে অভ্যস্ত। তবে হ্যাঁ, মানুষ হিংস্র জীব জন্তু, প্রাকৃতিক দূর্যোগ, রোগ জীবাণু থেকে নিজেদের বুদ্ধিমত্তা দিয়ে জয়ী হয়েছে বার বার এবং এটি স্রষ্টার করুনা ছাড়া কিছু নয়। প্রাকৃতিক দূর্যোগ বা মহামারী মানুষের সৃষ্ট কর্ম ফল।
মহান স্রষ্টা এই পৃথিবীকে বাসযোগ্য করার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ নিয়মত দিয়েছেন। বাতাস, মাটি, পানি ও আলো মহান রব প্রদত্ত অশেষ নিয়ামত। আমরা কি এক বারও চিন্তা করেছি এই নিয়ামত গুলো আমরা সভ্যতার ক্রমবিকাশ বলে প্রতি নিয়ত ধ্বংস করেছি। কৃত্রিমতার আবরণে আমরা প্রকৃতির বিশুদ্ধ উপাদান গুলো নষ্ট করেছি শিল্পায়ন বা উন্নত জীবন যাত্রার দোহাই দিয়ে। আমরা এক বারও চিন্তা করি না নিজের কৃত্রিম আরামের জন্য air conditioner ব্যবহার করে পৃথিবীর তাপমাত্রা কত ডিগ্রি বৃদ্ধি করছি। হাজার জনের পানি কে নিজের স্বার্থে কলকারখানা করে পুরো পানি উৎস কে দূষিত করছি। প্রকৃতির মাধ্যমে বিধাতা প্রদত্ত সমান সুখ বিলাসকে একাই ভোগ করার জন্য যন্ত্রপাতি আবিষ্কার করে অন্যের সুখ বিলাস কে হত্যা করতেছি। এক ব্যাগ সিমেন্ট বা একটি ইট তৈরির জন্য প্রকৃতির কতখানি ক্ষতি হচ্ছে তা অকল্পনীয়।প্রাকৃতিক যানবাহান ঘোড়া এর পরিবর্তে শিল্প বিল্পবে আসল ইঞ্জিন চালিত যানবাহন। ঘোড়া ঘন্টায় ৩০ কিলোমিটার চললে গাড়ি চলতেছে ঘন্টায় ৬০ কিলোমিটার। মানে গাড়ি আমাদের জীবনে ৩০ কিলোমিটার গতি দিয়েছে আর এই মাত্র ৩০ কি.মি গতি জন্য আমরা পৃথিবীর কতখানি ক্ষতি করেছি তা একটি মূহুর্তে জন্যও অনুধাবন করি নাই। পৃথিবীর সকল যান্ত্রিক আবিষ্কার আমাদের জীবনে গতি দিয়েছে মাত্র, উপাদান ব্যবস্থায় উপাদান বৃদ্ধি করেছে শুধু। সবকিছু দ্রুত করার জন্য আমরা পৃথিবীতে ধ্বংসলীলা চালিয়েছি। ধৈর্য্য হারিয়ে আমরা সবকিছু মূহুর্তে পেতে চেষ্টা করেছি আর এতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় আল্লাহ্ প্রদত্ত এই শৃঙ্খল ধরণীতে।
আমরা প্রাকৃতিক নিয়মের তৈরি রাত কে দিন করার জন্য আলো দূষণ করে হাজার হাজার জীব বিলুপ্ত করে নিজেদের ক্ষতি করছি। নিজেদের ভোগ বিলালের জন্য উজাড় করছি বনভূমি ও গাছপালা হাজার বছর ধরে যা হাজার হাজার ইকোসিস্টেম কে ধ্বংস করতেছে। প্রকৃত অর্থে সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকে আমরা প্রকৃতি কে হত্যা করতেছি। এই হত্যাযজ্ঞের নতুন নতুন পদ্ধতি তৈরি করে সহজ সরল জীবন ব্যবস্থা কে দিন করে দিন জটিল করেছি। মূল কথা আমরা নব আবিষ্কারের নামে ধ্বংস করেছি মাত্র।
মানুষ মহাবিশ্ব জয় করল, এই জয় করল, সেই জয় করল বলে যা দাবি করি তা আসলে খু্বই নগন্য। আল্লাহ্ র সৃষ্টি লক্ষ কোটি তরঙ্গ মধ্যে মাত্র কয়েকটি খুঁজে বের করে মানুষ শব্দ,আলো,ছবি,ভিডিও আদান প্রদান করে বলতেছে তথ্য প্রযুক্তি র উৎকর্ষতা। আমরা ক্ষুদ্র ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস কে প্রতিরোধ করতে সক্ষমতা অর্জন করতে পারি নাই। শুধু মাত্র কয়েক প্রকার ভ্যাকসিন, এন্টিবায়োটিক বা কয়েক প্রকার রাসায়নিক বা কেমিক্যালের প্রয়োগ বা ব্যবহার (ঔষধ) আবিষ্কার করে বলি রোগের জয় যা প্রাকৃতির অপূরন্ত ভাণ্ডারের কাছে খু্বই নগন্য, যা হাস্যকর বটে । আর হাইব্রিডের নামে কৃত্রিম খাদ্য উপাদন করে আত্মঘাতী কর্মযজ্ঞে শামিল হয়েছি এখন।
বিগত ১ম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে এই ১ শতাব্দীতে আমরা পৃথিবীর যে পরিমাণ ক্ষতি করেছি সে পরিমাণ ক্ষতি পৃথিবী সৃষ্টি পর্যন্ত আগে হয় নি। কৃষি বিপ্লব, শিল্প বিপ্লব, উন্নত জীবন মান, আধুনিক সভ্যতা এবং টেকসই অর্থনীতির নামে আমরা তেল,গ্যাস, পাথর, বালি,মাটি, পানি, বায়ু ও আলো দুষিত করে বিলুপ্ত করেছি হাজার হাজার প্রাণী। আর নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণে রাজনীতির অজুতে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছি এক জাতি অপর জাতিকে। আমরা শুধু অপর জনকে হত্যা বা ধ্বংস করার জন্য পরমাণু অস্ত্রের নামে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করছি কিন্তু এর বিপরীতে একটি ক্ষুদ্র জীব কে রক্ষা করার জন্য কিংবা ভাইরাস- ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টি না হওয়ার জন্য কত পয়সা ব্যয় করেছি??
করোনা। বর্তমান সময়ের একটি মহামারী নাম। এর ফলে সৃষ্ট Covid-19 রোগের কারণে মানুষ আজ অসহায়। কোন যুদ্ধ বিগ্রহ ছাড়া আজ পৃথিবী অবোধ। অজানা শঙ্কায় সবাই ভৃত।উন্নত-অনুন্নত, ধনী- গরিব সবাই এখন একই কাতারে। অতীতে এই রকম মহামারী যুগে যুগে পৃথিবীতে এসে হয়ত সমগ্র পৃথিবী নতুবা একটি নির্দিষ্ট জাতির জন্য কিংবা নির্দিষ্ট ভূখন্ডের জন্য। এর থেকে মানুষ পরিত্রাণ পেয়েছি সত্যি কিন্তু কোটি কোটি প্রাণের বিনিময়ে। মহামারী আল্লাহ্ প্রদত্ত গজব বা শাস্তি। আর শাস্তি হলো আমাদের কৃত কর্মের ফল। আল্লাহ্ হয়ত মানুষ ব্যতীত তার অন্য সকল সৃষ্টি অর্থ প্রকৃতির অভিযোগ আমলে নিয়েছে কিংবা হয়ত কোন মজলুম জাতির অভিযোগ কবুল করেছেন। তাই আমাদের আজ এই দূর্দশা। আশা ও প্রত্যাশা মহান পরম করুনময় সৃষ্টিকর্তা আমাদের সাময়িক শাস্তি দিয়ে এর থেকে মুক্তি দান করবেন। তবে এখনই সময় মানুষ হিসেবে আমাদের ভুল ত্রুটি সংশোধন করার। আসুন শপথ করি মহান স্রষ্টার শ্রেষ্ঠত্ব শিকার করে তার সমগ্র সৃষ্টি বা নিয়ামতের শুদ্ধ ব্যবহার করে, দূষণ ও হত্যা নিভৃত করে অনিষ্টের হাত থেকে আমরা আমাদের রক্ষা করি।
লেখকঃ এডভোকে আহমেদ মিরাজ
লিগ্যাল অফিসার, এনসিসি ব্যাংক।